সুদীপ চন্দ ও রানা চক্রবর্তী, কলকাতা : মোহনবাগানের ডুরান্ড জয়। এই তো কয়েকদিন আগেই এই মাঠ থেকেই মাথা নীচু করে ফিরতে হয়েছিল। তখন মোহনবাগান পরের রাউন্ডে যেতে পারবে কি না সেই বিষয়েও সন্দেহ ছিল। আজ ভাগ্য বদলেছে। মোহনবাগান ফাইনালে উঠেছে। শুধু তাই নয়, ইস্টবেঙ্গলকে ওই মাঠেই হারিয়ে ডুরান্ড কাপ জিতেছে মোহনবাগান। দিমিত্রি পেত্রাতোসের অসাধারণ বাঁ পায়ের শটে গোলটাই চেক মেট করে দিল।
প্রথম ৪৫ মিনিটে দু দলই দাঁড়িয়ে ছিল এক সারিতে। এর মধ্যে শেষ বেলায় একসঙ্গে চার ফুটবলারের হলুদ কার্ড দেখা ছাড়া তেমন কোনও উত্তেজনা ছিল না। ১৯ বছর আগে ডুরান্ড ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই বড় ক্লাব। ২০০৪ সালের সেই ফাইনালে দিল্লি আম্বেদকর স্টেডিয়ামে চন্দন দাসের জোড়া গোলে ডুরান্ড জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেদিন লাল কার্ড দেখেছিল ইস্টবেঙ্গলের একজন। আজ ১৯ বছর পর আবার ডুরান্ড ফাইনালে কার্ড দেখলেন অনিরুদ্ধ থাপা। আজ চন্দন দাসকে ম্লান করে যুবভারতীতে নায়ক হলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস।
দুই দলের খেলায় বড় ম্যাচের ঝাঁঝ দেখা গেলেও, গোল হয়নি। খেলার ৪ মিনিটের মাথায় মোহনবাগান ম্যাচের প্রথম কর্নার পায়। তবে পেত্রাতোস কর্নার থেকে সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ। মাঠের মধ্যেই বল রাখতে পারলেন না তিনি। খেলায় ৯ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল ফরোয়ার্ড হাভিয়ের সিভেরিয়ো ও শুভাশিস বোস ঝামেলায় জড়ান। সিভোরিয়ো ক্ষোভ জাহির করেন। হলুদ কার্ডের দাবিও উঠে। তবে রেফারি তা নাকচ করে দেন। খেলার ১৫ মিনিটের মাথায় ফের মোহনবাগান কর্নার পেলেও, তা কাজে লাগাতে পারল না। পেত্রাতোস ভাল জায়গায় বল রাখলেও, তা ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বাইরে বের করে দেয়। থ্রো পেলেও, তাতেও বড় সুযোগ তৈরি হল না।
এরপর ১৯ মিনিটের মাথায় বোরহার সুন্দর থ্রু বল আরেকটু হলেও পায়ে পেয়ে যাচ্ছিলেন মহেশ নাওরেম। মোহনবাগান গোলের বাঁ-দিক থেকে মহেশ কিন্তু সেই বল পায়ে পেলে সবুজ মেরুন রক্ষণ চাপে পড়ত। তবে আনোয়ার আলি নিঁখুত ট্যাকেলে সেই আক্রমণ প্রতিহত করে বল বাইরে বের করে দেন। খেলার ৩০ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে নন্দকুমারের দুরন্ত রান এবং তারপর সল ক্রেস্পোর সঙ্গে ওয়ান টু খেলে মোহনবাগান রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। তবে শেষমেশ মোহনবাগান রক্ষণ তা আটকে দেয়। লাল হলুদের তরফে পেনাল্টির দাবি উঠলেও, রেফারি তা কানে তোলেননি।
প্রথমার্ধেই লাল হলুদ সেন্টার ব্যাক এলসে চোট পান। চোট নিয়ে তিনি খানিকটা সময় খেলা চালিয়ে গেলেও, শেষমেশ মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। তাঁর বদলে পার্দো মাঠে নামেন। প্রথমার্ধের শেষের দিকে সাহাল, পেত্রাতোসরা গোলের সুযোগ পেলেও, তা কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথমার্ধ গোলশূন্য শেষ হয়। কোনও দলই তেকাঠির মধ্যে নিজেদের একটিও শট রাখতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গল ৪৭ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ পায়। আনোয়ার আলির ব্য়াক পাস আরেকটু হলেই পেয়ে যাচ্ছিলেন সিভেরিয়ো। তবে বিশাল কাইথ কোনওরকমে বল বের করে দেন। ম্যাচ গড়ালেও, গোল না আসায় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বিরক্তি বাড়ে। রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে হলুদ কার্ড দেখেন লাল হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতও। লড়াইটা মূলত মাঝমাঠেই চলছিল। এমন সময় বল দখলের লড়াইয়ে হাই বুটের জন্য দ্বিতীয় হলুদ কার্ড ও লাল কার্ড দেখেন অনিরুদ্ধ থাপা। ১০ জনে নেমে যায় সবুজ মেরুন। তবে একজন কমে নিয়ে খেললেও, মোহনবাগানের খেলা দেখে কিন্তু তা বোঝা দায় ছিল। একের পর এক আক্রমণ গড়ে তোলে সবুজ মেরুন। ৭১ মিনিটে পেত্রাতোস দুরন্ত প্রতিআক্রমণে লাল হলুদ বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে শট নেন। তা লাল হলুদের জালে জড়িয়ে যায়। লিড পায় মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল একাধিক বদল করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে বটে। ক্লেটন, নন্দকুমাররা গোলের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার হন বিশাল কাইথ। গোল্ডেন গ্লাভস পান তিনি।
টুর্নামেন্টের সেরা হন নন্দ কুমার। গোল্ডেন বল পান তিনি।