কলকাতা, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ – কলকাতার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় রচিত হলো গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের শতবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে। কালিঘাট পার্কের নিকট অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী চার্চটির প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গাপুরের মেট্রোপলিটন মাননীয় কনস্টান্টিনোস, ভারতে নিযুক্ত গ্রীসের রাষ্ট্রদূত মাননীয়া আলিকি কাউটসোমিটোপুলু এবং গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের অভিভাবক শ্রী রাজু ভারত।
কলকাতার গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ, যা ভারতে একমাত্র, ঐতিহাসিক স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এটি গ্রীক সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। ১৯২৪ সালে আমরতোলা স্ট্রিটের পুরনো গ্রীক চার্চ অফ দ্য ট্রান্সফিগারেশন-এর পরিবর্তে এই চার্চটি নির্মিত হয়। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের দ্বারা এটিকে একটি হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই চার্চ গ্রীকদের ভারতবর্ষে বসবাস ও বাণিজ্যের ঐতিহাসিক অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেয়, যা শুরু হয়েছিল ১৬৯০ সালে এবং ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছিল।
সিঙ্গাপুরের মেট্রোপলিটন মাননীয় কনস্টান্টিনোস তাঁর ভাষণে বলেন, “কলকাতার গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ শুধুমাত্র একটি উপাসনালয় নয়, এটি গ্রীস এবং ভারতের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক চিরন্তন প্রতীক। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার সংরক্ষণের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের পরিচায়ক।”
ভারতে নিযুক্ত গ্রীসের রাষ্ট্রদূত মাননীয়া আলিকি কাউটসোমিটোপুলু বলেন, “এই ঐতিহাসিক চার্চের শতবর্ষ উদযাপন গ্রীস এবং ভারতের গভীর সম্পর্কের প্রতিফলন। এটি শুধু সম্প্রদায়ের জন্য এক আত্মিক শান্তির স্থান নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ, যা আমাদের যুগ্ম ইতিহাসের কথা বলে।”
অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে চার্চটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। উঁচু প্লিন্থে নির্মিত এবং সাদা মার্বেলের সিঁড়ি দিয়ে প্রবেশযোগ্য এই চার্চ গ্রীক অর্থোডক্স স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। এর ক্লাসিক্যাল ফ্যাসাড, ঐতিহ্যবাহী আইকোনোস্ট্যাসিস এবং সমৃদ্ধ প্রতীকবাদ উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে ভক্ত, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং গ্রীক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, যা চার্চটির সর্বজনীন আকর্ষণকে প্রতিফলিত করে।
গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের অভিভাবক শ্রী রাজু ভারত বলেন, “শতবর্ষ উদযাপন শুধু অতীতকে স্মরণ করার জন্য নয়, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করার জন্যও। কলকাতার গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ তার উপাসনা, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কেন্দ্র হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবে।”
শতবর্ষ উদযাপন এক গভীর শ্রদ্ধা ও গর্বের অনুভূতির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা চার্চটির গত ১০০ বছরের অসাধারণ যাত্রার কথা স্মরণ করেন। এই অনুষ্ঠান বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির এক চিরন্তন চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে, যা গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ বহন করে চলেছে। নতুন শতাব্দীতে পদার্পণ করে, চার্চটি তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি গ্রীক সম্প্রদায় এবং বৃহত্তর ভারতীয় সমাজের মধ্যে এক আত্মিক এবং সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন রচনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।