ছবি সংগৃহীত

রানা চক্রবর্তীকলকাতা : ইস্টবেঙ্গলের স্বর্ণযুগের, অর্থাৎ ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫, ফুটবল সেক্রেটারি শ্রী অজয় শ্রীমান আজ সকালে ৯২ বছর বয়সে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারের রওনা দিলেন। ১৯৪৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য হন। ঘটি বাড়ির ছেলে হলেও তিনি ছিলেন ইস্টবেঙ্গল অন্তপ্রাণ। জ্যোতিষ চন্দ্র গুহ অনেকদিন ধরেই শ্রীমানী বাবুকে নজর করেছিলেন। ১৯৬৬ ১ লা বৈশাখ সকালে বার পুজো চলাকালীন জ্যোতিষ বাবু শ্রীমানী বাবুকে ডেকে বলেন “মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে এসে ক্লাবের কাজে যুক্ত হও তোমাকে আমার খুব দরকার।” সেই শুরু। ক্লাবের কার্যকরী সদস্য হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করলেন। দুর্ভাগ্যবশত ১৯৬৮ সালে জ্যোতিষ বাবুর কিছু কার্যকলাপে মতপার্থক্য হওয়ায় তিনি কার্যকরী কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি যোগদান ডাক্তার নৃপেন দাসের দলে। ১৯৭০ সালে সৌমেন মিত্র সহচর্যে আসেন এবং সেখান থেকেই পরিচয় হয় জীবন ও পল্টুর সাথে। এই জুটির দৌলতে ৩৫ টি ব্যালট জোগাড় করে ডাক্তারবাবুর দলকে নির্বাচনে জয়ী করেন। ডাক্তারবাবু কিন্তু প্রথমে ওনাকে কোন উঁচু পদ দিতে চাননি কারণ উনি ছিলেন ঘটি বাড়ির । কিন্তু ১৯৭২ সালে শ্রীমানি বাবু ফুটবল সচিব হন। এই পদে এসেই তিনি দলে আনেন গৌতম সরকার মোহন সিং লতিফ উদ্দিন আকবরের মতো তারকাদের। এই বছরই প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে ইস্টবেঙ্গল ত্রি মুকুট জয় করে সেই সঙ্গে কলকাতা লিগ ও ডিসিএম ট্রফিও যেতে। ১৯৭৩ সালে তিনি সুভাষ ভৌমিকদের দলে নিয়ে আসেন এবং সেই বছর ইস্টবেঙ্গল আইএফএ শিল্ড ও ডি সি এম এ দুটি করীয় দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। এমনও শোনা যায় ক্লাবের খেলোয়াড় আনতে ও তাদের পেমেন্ট করতে গিয়ে তিনি তার একাধিক বাড়ি বিক্রি করেছেন। ১৯৭৫ এর পরে তিনি ধীরে ধীরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকলাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। বিশ্বনাথ দত্তের অনুরোধে তিনি দীর্ঘ ১০ বছর আইএফএ রেফারি প্যানেল এবং সিএবি কমিটিতে ছিলেন। এরপর তিনি নিজেকে ময়দান থেকে সরিয়ে নেন। একরাশ অভিমান নিয়ে তিনি আর ক্লাব মুখ হননি যদিও ক্লাব থেকে বহুবার তাকে আসার অনুরোধ জানানো হয়। ক্লাবের শতবর্ষ অনুষ্ঠান চলাকালীন তৎকালীন কর্ম সমিতির সদস্যরা ওনাকে ইনডোর স্টেডিয়ামে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন। বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি আর বেরুতে পারতেন না শেষের দিকে ওনার স্মৃতিশক্তি ও ঝাপসা হয়ে আসছিল। সুখিয়া স্রিটের প্রাসাদ প্রমো বাড়িতে তিনি তার দুই ছেলে দুই বৌমা ও নাতি নাতনিদের নিয়ে পুরনো স্মৃতিচারণ করে বেঁচে ছিলেন। আজ সকাল ১১.৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফ থেকে উনাকে ক্লাব পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়। মোহনবাগান ক্লাবের তরফ থেকে উনার মরদেহের মাল্যদান করা হয়। বিকেল বেলা তিনি শেষবারের মতো তার সুখিয়া স্ট্রিটের বাড়ি থেকে তিনি অন্তিম যাত্রা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − thirteen =