দেবব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা : ১৯৩১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এলাহাবাদে আলফ্রেড পার্কে চলেছিল এক ভয়ংকর যুদ্ধ। যুযুধান দুই পক্ষের এক পক্ষে অগণিত পুলিশ এবং তাদের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, অপরপক্ষে ভারত মায়ের বীর সন্তান চন্দ্রশেখর আজাদ হাতে শুধুমাত্র একটি পিস্তল। একাই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সমস্ত বাহিনীকে। সে লড়াই মরণপণ লড়াই। তাঁকে ধরতে আসা ব্রিটিশ পুলিশ বুঝেছিল ভারত মায়ের বীর সন্তানদের অসীম বিক্রম। তার গুলিতে এক এক করে ধরাশায়ী হয় তিনজন বন্দুকধারী পুলিশ। কিন্তু গুলি শেষ হয়ে যেতে থাকে ক্রমশ, রক্তাক্ত আজাদ আত্মসমর্পণের বার্তা কে তুচ্ছ করে। ঘোষণা করেন – “হাম আজাদ থে ,আজাদ হ্যায়, আওর আজাদ রহেঙ্গে”। এই ঘোষণার পর নিজের পিস্তলের শেষ গুলিটি চালিয়ে দেন নিজের মাথায়। আজাদ মানে স্বাধীন । যে নিজেই স্বাধীন তাঁকে কি কেউ কখনও বন্দী করতে পারে ?তাই সেদিন সেই বিশাল সশস্ত্র ইংরেজ বাহিনী বন্দী করতে পারিনি আজাদকে। স্বাধীন ভারতে, এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কের নাম তার স্মৃতিতে করা হয়েছে চন্দ্রশেখর আজাদ পার্ক। ১৯০৬ সালের ২৩ জুলাই চন্দ্রশেখর আজাদের জন্ম হয়। তার প্রকৃত উপাধি তিওয়ারি। ব্রাহ্মণ পরিবারের এই সাহসী সন্তান কে পরিবারের থেকে পাঠানো হয় সংস্কৃত বিদ্যা শিক্ষা করার জন্য। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ভারতের সর্বত্র। সমান ভাবে চলতে থাকে বর্বর ব্রিটিশ পুলিশের দমন-পীড়ন। এই নির্মম দৃশ্য দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি চোদ্দ বছরের চন্দ্রশেখর । পথ থেকে পাথর তুলে ছুড়ে মারেন এক গোরা পুলিশকে। পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। কিশোর বয়সের জন্য অচিরেই ছাড়া পান। কিন্তু এই ঘটনা তাঁকে প্রত্যক্ষ ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করে। প্রথমদিকে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, পরবর্তী সময়ে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হন এবং হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এ্যসোসিয়েশনের (এইচআরএ) বিপ্লবী সংগঠন গঠনের সক্রিয় সদস্য হন। তাঁর ওপর তহবিল সংগ্রহের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়।বেশিরভাগ তহবিল সংগ্রহ করা হতো সরকারি সম্পত্তি ডাকাতির মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে ধরা না পড়লেও, ১৯২৫ সালে কাকোরিতে ট্রেন লুটের পর পুলিশের চোখে এদের নাম চলে আসে। অন্যান্য সকলেই ধরা পড়লেও আজাদ সেখান থেকে অন্যত্র চলে গিয়ে আবার বিপ্লবের কাজ শুরু করেন। এরপরই ভগৎ সিং এর সঙ্গে যৌথ ভাবে পুলিশ সুপার স্যান্ডার্স কে গুলি করে হত্যা করে লালা লাজপত রায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেন। এখানেও অন্যরা ধরা পড়লেও তিনি ঠিক থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। সঙ্গী ভগৎ সিং এর ফাঁসির বিরুদ্ধে সহায়তা উদ্দেশ্যে যোগাযোগ করেন গান্ধীজীর সঙ্গে। কিন্তু গান্ধীজী সশস্ত্র সংগ্রামীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাননি। কিন্তু আজাদ থেমে যাওয়ার পাত্র নন। তিনি নেহেরু সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু শোনা যায় তাদের মধ্যে শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড মতবিরোধ ও বিতর্ক। সেখান থেকেই বেরিয়ে সাইকেলে করে সোজা পৌঁছেছিলেন আলফ্রেড !পার্ক। অনেকের মতে কোন বিশ্বাসঘাতকের সুনিদৃষ্ট বার্তা পেয়েই চিরকাল অধরা আজাদকে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অতর্কিতে ঘিরে ধরে ইংরেজ পুলিশ।