কাশ্মীরে ট্রেকিংয়ে ছিলাম', যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ১২ দিন পর প্রকাশ্যে 'নিখোঁজ' অরিত্র
ছাত্রমৃত্যুর ১২ দিন পর প্রকাশ্যে ‘নিখোঁজ’ অরিত্র

অভীক পুরকাইত,কলকাতা:-যাদবপুর হস্টেলে ছাত্র মৃত্যুকাণ্ডে ঘটনার ১২ দিন পর প্রকাশ্যে এলেন অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু। এই অরিত্রকে নিয়ে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার পড়েছিল যাদবপুরে। যা নিয়ে শোরগোল কম হয়নি। অনেকে দাবি করেছিলেন, অরিত্র ঘটনার পর পালিয়েছে। আবার এও শোনা গিয়েছিল, কোনও এক নেতার সাহায্যে ভিন রাজ্যে পালিয়েছে অরিত্র। তবে সব জল্পনার অবসান হল। প্রকাশ্যে এলেন অরিত্র। তাঁকে নিয়ে যে চর্চা চলছে সেই বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। জানালেন, তিনি ছিলেন না।ফেসবুক পোস্টে অরিত্র জানিয়েছেন, তিনি তদন্তে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তাঁকে নিয়ে যে সব রটনা হচ্ছে তা সত্যি নয়। তিনি পালিয়ে যাননি। কাশ্মীরে ছিলেন ট্রেকিংয়ে। বেশ কয়েকমাস আগে থেকে তাঁর টিকিট কাটা ছিল। সেই সবের প্রমাণও রয়েছে তাঁর কাছে।

ফেসবুক পোস্টে সৌরভ লেখেন, ‘ ৯ আগস্ট রাতে আমি যাদবপুরের মেন হোস্টেলে ঢুকিইনি। এমনকি, তার আগের বেশ কিছুকাল আমি হোস্টেলে যাইওনি। আমি সেই রাতে কেপিসি হাসপাতালেও গিয়ে উঠতে পারিনি। ফলে, গোটা অভিযোগটাই অবান্তর। আশা করি, তদন্ত করলে এই কথা সহজেই প্রমাণ হবে।
এরপর দ্বিতীয় অভিযোগ। আমি নাকি এই ঘটনার পর থেকে পলাতক। এমনকি, কেউ কেউ লিখেছেন, লিখে চলেছেন, রাজ্যের শাসকদলের কোনও এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় আমি লুকিয়ে আছি। এই অভিযোগ অভাবনীয়। আমার ও আমার পরিবারের দিক থেকে দেখলে বীভৎসও বটে।

প্রশ্ন হল, আমি এতদিন কোথায় ছিলাম? ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, আমি রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লির উদ্দেশ‍্যে রওনা দিয়েছিলাম। সেখান থেকে পরের দিন শ্রীনগরগামী ফ্লাইট ধরি। আমাদের গন্তব্য ছিল কাশ্মীর গ্রেট লেকস। এই ট্রেকে আমার সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন। এবং, যাঁরা এই ট্রেকিং রুটের ব্যাপারে অবহিত, তাঁরা জানেন, এখানে নেটওয়ার্কের বালাই নেই। প্রায় চারমাস আগেই (২২ ও ২৩ এপ্রিল) টিকিট কাটা হয়েছিল ট্রেন ও ফ্লাইটের। সেসবও নেওয়া হয়েছিল যাওয়ার আগে। এই সব নথিই আপনাদের সামনে থাকল। কোনওদিন ভাবিওনি, এভাবে ব্যক্তিগত নথি ও প্রমাণ দেখিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে। ১০ আগস্ট, ট্রেন ধরার আগে, সকালে আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। যাঁরা সেই রাতের ঘটনার পরেই আমার ফেরার হওয়া নিয়ে প্রচার করছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল সেদিন। আমি ট্রেকে যাব, সে কথা আমার রিসার্চ গাইডকে আগেই জানিয়েছিলাম। তিনি সম্ভবত তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েওছেন। কোনও এক ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার বাবাও একই কথা বলেছেন শুনলাম। আমার সতীর্থ ও বন্ধুরাও নানা জায়গায় এই কথা বলে থাকতে পারেন। কিন্তু, তারপরেও আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টানা ‘পলাতক’ প্রচার চলেছে। আমার পরিচিত অনেকে এই কথা লিখে গেছেন প্রায় নিঃসঙ্কোচে। যেন তারা নিশ্চিত। একাধিক প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার নাম ও ডাকনাম (আলু) ধরে বিচারসভা বসানো হয়েছে। একাধিক সাংবাদিক ফেসবুকের ব্যক্তিগত পোস্টেও এই মত প্রচার করেছেন। সব মিলিয়ে, একটা ‘সত্য’ গড়ে-পিটে নেওয়া হয়েছে– আমি র‍্যাগিং ও ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। সেই রাতে প্রমাণ লোপাট করেছি এবং তারপর পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছি। যাঁরা এই কদিন ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টক শো-তে আমাকে নিয়ে এই অভিযোগ ও প্রচারে অংশ নিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই আমি মিছিলে হেঁটেছি। কারও কারও সঙ্গে রাজনৈতিক মতান্তর থাকলেও একসঙ্গে হাতে-হাত ধরে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।’


প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পডুয়ামৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই সৌরভ চৌধুরী-সহ প্রাক্তনী ও বর্তমান পড়ুয়া মিলিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে আরও অনেকের নাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − two =